ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারেও ঢুকে পড়েছে নকল ডিম

কক্সবাজার প্রতিনিধি  ::::
রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি চীনের কৃত্রিম ডিম এখন ঢুকে পড়েছে কক্সবাজারেও। পর্যটন মৌসুম ঘিরে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী ফার্মের মুরগির ডিমের আড়ালে কৃত্রিম ডিম বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ আসছে। ডিমগুলো দেখতে প্রায় মুরগীর ডিমের মতো হওয়ায় ক্রেতারা আসল ও নকল ডিমের পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। এতে ক্রেতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিতে পড়ছেন।
কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা হাসানুল আবেদীন শুভ জানান, তিনি কোরবানীর ঈদের রাতে রুমালিয়ারছড়ার একটি সুপার শপ থেকে বেশকিছু সাদা ডিম কিনেন। রান্নার সময় ওইসব ডিম নকল বুঝতে পারায় তিনি পরে একই দোকান থেকে সাদা ডিমগুলো বদল করে লালচে ডিম নেন। বাড়ি ফিরে পরখ করে দেখেন ওই ডিমগুলোও নকল। তিনি আশংকা করছেন, কক্সবাজারে ইতোমধ্যেই ব্যাপকহারে নকল ডিম প্রবেশ করেছে।
শুধু শুভ নন, এভাবেই প্রতিদিন কৃত্রিম ডিম কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।
ভোক্তাদের আশংকা, পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারগুলোতে কৃত্রিম ডিম ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্রেতারা জেনে বা না জেনে এসব ডিম কম দামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তুলছেন। ওই ডিম বিক্রি করা হচ্ছে দেশীয় আসল ডিমের দামেই। পর্যটন মৌসুমে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ডিমের চাহিদা বেশি থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ডিম ব্যাপকহারে বাজারে আনছেন।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট মর্নিং নিউজ এজেন্সিসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি গণমাধ্যম বলেছে, মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুনসহ ওই দেশের বিভিন্ন এলাকায় সীমান্তের চোরাপথে চীন থেকে কৃত্রিম ডিম পাচার হচ্ছে। চোরাপথে সেই ডিম ভারতসহ আশপাশের অন্যান্য দেশেও সয়লাব হয়েছে। আর এই অন্যান্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশও অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকী দ্য ইন্টারনেট জার্নাল অব টক্সোকোলজির তথ্যমতে, নকল ডিম তৈরির বিষয়টি নতুন নয়। এই কৃত্রিম ডিম ২০০৪ সাল থেকেই তৈরি হচ্ছে। এই ডিমে কোনো খাদ্যগুণ তো নেই বরং উল্টো মানবদেহের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর। কেননা কৃত্রিম ডিম তৈরিতে ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বনেট, স্টার্চ, রেসিন, জিলেটিন। যেগুলো মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ। এমনকি দীর্ঘদিন এ ধরনের ডিম খেলে স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনিতেও সমস্যা হতে পারে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ফুসফুসের ক্যান্সারসহ জটিল রোগেরও কারণ।
সূত্রে জানা গেছে, কৃত্রিম ডিম অনেক বেশি ভঙ্গুর। এর খোসা অল্প চাপেই ভেঙে যায়। এই ডিম সিদ্ধ করলে কুসুম বর্ণহীন হয়ে যায়। ভাঙার পর আসল ডিমের মতো কুসুম এক জায়গায় না থেকে খানিকটা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় পুরো কুসুমটাই নষ্ট ডিমের মত ছড়ানো থাকে। কৃত্রিম ডিম আকারে আসল ডিমের তুলনায় সামান্য বড়। এর খোলস খুবমসৃণ হয়। খোসায় প্রায়ই বিন্দু বিন্দু ফুটকি দাগ দেখা যায়। রান্না করার পর এই ডিমে অনেক সময় বাজে গন্ধ হয়। কিছু ক্ষেত্রে গন্ধ ছাড়া থাকে। আসল কুসুমের গন্ধ পাওয়া যায় না। নকল ডিমকে যদি সাবান বা অন্য কোনো তীব্র গন্ধযুক্ত বস্তুর সাথে রাখা হয় তাহলে, ডিমের মাঝে সেই গন্ধ ঢুকে যায়। রান্নার পরেও ডিম থেকে সাবানের গন্ধ থাকবে। নকল ডিমের আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল, ডিম দিয়ে তৈরি খাবারে এটা ডিমের কাজ করে না। যেমন পুডিং বা কাবাবে ডিম দেয়া আঠার কাজ করার জন্য। কিন্তু রান্নার পর দেখা যায় কাবাব ফেটে যাবে। পুডিং জমবে না। নকল ডিমের আকৃতি অন্য ডিমের তুলনায় তুলনামূলক লম্বাটে ধরণের হয়ে থাকে। নকল ডিমের কুসুমের চারপাশে রাসায়নিকের পর্দা থাকে বিধায় অক্ষত কুসুম পাওয়া গেলে সেই কুসুম কাঁচা কিংবা রান্না অবস্থাতে সহজে ভাঙতে চায় না। এই ডিম ভেঙ্গে কিছুক্ষণ বাটিতে রাখলে কুসুমের সাথে কুসুমের বাইরের সাদা আবরণ মিশে যায়। কারণ ওই আবরণ তৈরি করা হয় জিলেটিন দিয়ে। ডিম ভাঙ্গার আগে ঝাঁকুনি দিলে পানির শব্দ হয়। যা আসল ডিমে হয় না।

পাঠকের মতামত: